Sep 22, 2014

স্বাধীনতা

- মানস কুমার ঘোষ -


খাবারগুলো গুছিয়ে, খাবারের নির্দেশগুলো বুঝিয়ে,
বেলা এগারটা বেজে গেলো, জয়ার বেরোতে বেরোতে ;
বাপের বাড়িতে আজ গেট-টুগেদার,
আমার যাওয়া হল না – পড়েছি যে জ্বরে ;
তবে আজ দেদার স্বাধীনতা -
মনের মত খাবার না পেলেও, সময় মেনে খাওয়ার হুকুমনামা নেই,
ইচ্ছেমত টিভি দেখা যাবে ; সন্ধ্যা অবধি আজ আমি একেবারে একা ।
সামনের বারান্দাতে এসে বসি ।
পার্কটায় বাচ্চা ছেলেগুলোর পায়ে ফুটবল ;
আর একটু দূরে কতকগুলো বস্তির ছেলে মেয়ে কী যেন খেলছে –
লুকোচুরি, এক্কা-দোক্কা, নাকি অন্যকিছু ।
অনেকটা দূরে হঠাৎ চোখ পড়ে গেল –
চুপটি করে একলা বসে আছে সে,
ছেঁড়া হাতকাটা গেঞ্জি, আর কালো রঙের হাফ প্যান্ট ।
নামটা কী যেন –
বীল্লা, ঝিলকু, রঘু, বাবলা নাকি রাজা ; ভুলে গেছি একেবারে ।
ছেলেবেলা থেকেই মা বেপাত্তা, বাপটাও টেঁসেছে গত বছর –
মদ খেয়ে, লিভারটা পচিয়ে ।
বড়ো রাস্তার মুখেই এ পাড়ার বাজার, সেখানেই শিবুর চায়ের দোকান,
দোকানে কাজ করতো ছেলেটা,
চা-বানানো, বাসন-মাজা, আরও অনেক ফাঁই–ফরমাস ।
খেতে পেত সেখানেই ।
খাবারের সাথে চড়, গাঁট্টাও জুটত রীতিমত ।
চোখ দুটো বেশ মায়াবী, তার সাথে আছে বুদ্ধির ছোঁয়া ।
লেখাপড়া হয়ত হত, যদি সুযোগ পেত ।
শুনে শুনে দু চারটে ইংরাজি বলে ফেলত মাঝে মাঝে ।
দোকানের হিসাবটাও শিখছিল চটপট করে ।
এ পাড়ার কিছু সমাজসেবীদের চোখে পড়ে গেল,
মিটিং হয়ে গেল – চাইল্ড লেবার, প্রলেতারিয়েতের হাহাকার –
কিছুই বাদ গেল না ।
মিছিল হল, ওসির কাছে গেল আন্দোলনের হুঙ্কার ।
শিবুর দোকানটা ভেঙ্গে দিল পুলিশ – এইতো তিন দিন আগে ।
শিবু অবশ্য আর একটু দূরে খুলে ফেলল নতুন চায়ের ঝাঁপি ।
এসে গেল নতুন দুটো ছেলে ।
এবারের দোকানটা থানার কোল ঘেঁষে - সমাজসেবীদের চোখ পড়ার কথা নয় ।
শুধু থানাতে চা দিতে হবে ডিসকাউন্টে ।
ছেলেটাকে আর শিবুর দোকানে বেগার খাটতে হবে না ।
আন্দোলনের জয়ে উল্লসিত সমাজসেবীদের দল - হয়ে গেল বিজয় মিছিল ।

দুদিন ধরে সামনের পার্কে বসে আছে ছেলেটা – পেটে খিদে নিয়ে ।
আর নেই কোন চড় ও গাঁট্টা
এখন শুধু অবাধ স্বাধীনতা ।

16 Sept 2012


© Manas K Ghosh - Member WaaS

No comments: