Sep 22, 2014

কাক

- উদয়ন দাসগুপ্ত -


কাক আমার খুব পছন্দ !

হয়ত আপনার ভুরু উপরে উঠছে – “ওই আরেকজন ‘গ্রে সাবজেক্ট’ শুরু করল | আপদ, কাক নাকি পছন্দের !”

কী করি, আমার ভালো লাগে | দেখতে কালো, ডাকও নাকি কালো - বিপদের অগ্রদূত | কিন্তু খুব মজার পাখি |

কাক খেলেছেন কখনও ?

যদি কোনও কাক রাস্তায় বসে, তার সাথে হাঁটাহাঁটি খেলুন, সে উড়বে না, হাঁটবে চক্কর দিয়ে দিয়ে | আপনাকে খেপাবে, রেগে গেলে ডাকবে, ক্লান্ত হলে ডানা ছড়াবে, কিন্তু উড়বে না – যদি আপনার খেলার মেজাজ খেলোয়াড়ি থাকে | তাই বলে, খুব কাছে যাবেন না, তাহলে “খেলব না” ভাব করে পালিয়ে যাবে |

এই খেলাটা সকালে এবং বিকালে ভালো হয়, কারণ কাকের পেট ভরা থাকে | কেবল পেটে বড় দুঃখ, এমন কি কাকেরও | যদি একাধিক কাক থাকে, একজন খেলে, বাকিরা দ্যাখে, নাক গলায় না বাঙালিদের মত | এবার আপনার চরিত্র বিশ্লেষণ করুন | মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ফাটাফাটি | মুখ (বা ঠোঁট) দেখলে বুঝবেন সে হাসছে, না রাগছে, না বিরক্ত হচ্ছে | পাগল ভাবছেন, ভাবুন | আমি কাক খেলি, আর খেলবো !

আগে বলি |

লুকোচুরি খেলা | কোনও একা কাক যদি গাছের ডালে বা জানালায় বসে থাকে, আর সে যদি আপনার চোখ দেখতে না পায়, ভীষণ খেপে যায়, আর আগুপিছু হয়ে চেষ্টা করে আপনার চোখ দেখতে | দেখাবেন, তবেই মজা পাবেন, নইলে ‘মাটিং চকার’, মানে খেলা মাটি | আর যদি দেখেন, যা মজা পাবেন, তা কোনও বাংলা সিরিয়াল এ পাবেন না | বিশ্বাস হচ্ছে না ? বয়ে গেল | আমি চোর পুলিশ খেলব বিনা পয়সার পালা | কেউ দেখে ফেললে আপনার সম্মানে আগুন, কিন্তু এটা তো কাক পক্ষীর জানার কথা নয় | কাকের সংঘবদ্ধতা সবাই জানে, এই খেলায় প্রমাণ পাবেন |

কাকের ভাষা বোঝেন ? খুব সোজা | সবটা বলব না | আমি ‘কাক সহজপাঠ’ লিখতে বসিনি | শুধু অন্য চোখে বা অন্য মনে ভাবতে বলেছি | “যদি ভালো না লাগে তো খেল না কাক !”

কাক শুনেছি যমের বাহন | তাকে খেতে দিলে নাকি যম খুশি হয় | মানে,

“কাকের মুখের দিলাম অন্ন,
যমের দুয়ার হল কণ্টকাকীর্ণ” |

তাই বলে ভাত দেবেন না | আস্কারা দিলে কাকও মানুষের মত পেয়ে বসবে, আর আপনাকে বিরক্ত করবে | কিন্তু, তাতে মনে হয় না আপনার আয়ু বাড়বে, বরঞ্চ মাঝখান থেকে চালের খরচা বেড়ে যাবে | যা দিনকাল, পোষাতে পারবেন না, আর পোষ মানাতেও | তার চেয়ে বিনে পয়সায়, নিশ্চুপে খেলুন | এটা প্রারম্ভিক খেলা | উদ্যোক্তা আসবে না হয়তো | তবে কাক নিজে সম্প্রচার করে, আর সেটা এত ফলপ্রসূ যে মুহূর্তে একশ কাক জড়ো হয়ে যাবে | যদি বেগড়বাই করেন তাহলে অবশ্য,  

“একতাবদ্ধ হয়ে আমরা জুড়ি,
একতা-হীন হয়ে আমরা উড়ি !”

ফিরে আসি যমের দুয়ারে, থুড়ি, বাহনের কথায় | কাক যদি যমের সাথীই হয়, তবে ভয় কেন পায় ছোট পাখিদের ? পায়রা কে ডরায়, কিন্তু চিলের পিছনে লাগে | চরিত্র বিশ্লেষণ করুন, উত্তর নিজেই পাবেন | আমি কোন কাকতাড়ুয়া এসেছি, যে বলব ?

“হরি দিন তো গেল, সন্ধ্যা হোলো” ... ইত্যাদি – সন্ধেবেলা, কাকেদের সভা দেখেছেন ? একশ কাক তারে বসে চুপচাপ দিনের বিশ্লেষণ করে | (এটা বানিয়ে বললাম, জানি না কী করে | যদি খবর পাই, বলব ) যাক, সে অন্য কথা | গোধূলি তো আমরা দেখি না, তবে এই সময়টাকে “কাক-লগ্ন’ বলতে আমার আপত্তি নেই |

কাকের প্রেম দেখেছেন ? পার্কে উঁকিঝুঁকি না মেরে, সোজাসুজি বাড়ির জানালা দিয়ে দেখুন | কাক পায়রার মত লোক দেখানো প্রেম করে না, গভীর প্রেম, কথা অবান্তর সেখানে | দোসর কে কত সুরে ডাকে – হ্রস্ব সুর, দীর্ঘ সুর, নিচু সুর, উঁচু সুর, কখনও আলাদা সুরে, কখনো পুনরাবৃত্তি করে |

দেখুন আর ভাবুন, আগামী জন্মে কাক হয়ে আমার সাথে প্রাণের আলাপন করবেন কি না |

পুনর্জন্ম আছে কি না জিজ্ঞাসা করছেন ? আরেক দিন বলব | সব এক দিনে হয় নাকি ?

“যা, যা, হুস !”


© Udayan Dasgupta - Member WaaS

No comments: