Sep 22, 2014

ছেলেবেলার কলকাতা

- অনিরুদ্ধ সেন -


[কম খেটে কার্যোদ্ধারের অভ্যাস আমার আবাল্যের; আজকেও তাই নিজের পুরনো লেখা থেকে টুকে দায় সারছি। আমার তিনটি ব্লগের একটিতে ছেলেবেলার কিছু স্মৃতি লিপিবদ্ধ করেছি; এই লেখাটা সেখান থেকেই কিছু কাট ছাঁট করে টোকা। পাঠক নিজগুণে ক্ষমা করে দেবেন।]


আমাদের কলকাতার আস্তানা, ২০২ রাসবিহারী অ্যাভ়িনিউ, আধুনিক বাংলা কবিতার ঠিকানা হিসেবে তামাম কবিতাপ্রিয় বাঙালির চেনা, অন্তত এক কালে তাই ছিল৷ ডোভ়র লেনের দিক থেকে রমণী চাটুজ্যে স্ট্রীট দিয়ে সোজা এসে রাসবিহারী অ্যাভ়িনিউ পেরুলে যে কালো লোহার দু পাল্লার গ্রিল গেটটায় থমকে দাঁড়াতে হয়—আজকালকার ফঙ্গবনে সেকশন ওয়েল্ড করা নয়, দস্তুরমত ঢালাই করা মাল—সেটাই ২০২, অবশ্য হকারদের নিবিড় অরণ্য ভেদ করে যদি এখন দৃষ্টি যায়! দুঃখের বিষয়, বাড়িটা এবছরই ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। আমার শিশুকালের গড়িয়াহাট অনেক পরিপাটি ছিল, ফুটপাথে অনেক গাছ, অ্যাভ়িনিউ নাম সার্থক: রাসবিহারী বিথী৷ ঠাকুদ্দা ঠাকুমার ঘরের জানলা দিয়ে রমণী চাটুজ্জে বরাবর নজর চলত বহু দূর—কংক্রিটারণ্যে ঠেকে যেত না৷

ট্রামের ঝঞ্ঝনায় একেকদিন কাকভোরে ঘুম ভেঙে গেলে সেই জানলায় দাঁড়াতাম, দেখতাম বাতিওয়ালা রাস্তার আলো নেভাচ্ছে৷ কালো লোহার ফ্রেমের চার দিকে কাচ, উলটোনো পিরামিড ফ়্রাসটাম বাতি৷ মই ঠেস দেওয়ার জন্য বাতিস্তম্ভের যুতসই জায়গায় চ্যাপলিনের নেকটাইয়ের মত দুটো আধ-হাত খানেক গোলমুন্ড হাতল৷ ভিস্তিওয়ালারা মোষের চামড়ার ভিস্তি কাঁখে রাস্তা ধুচ্ছে রোজকার রোজ৷ আমাদের বাড়ির কাছে গঙ্গাজলের নলধারা ছিল সতত প্রবহমানা; দমকলের একচেটিয়া সেই হাইড্র্যান্ট খুলে দিয়ে জীবনানন্দের কুষ্ঠরোগীর পক্ষে জল চেটে নেয়া সম্ভব ছিলনা কোনমতে, কারণ হয়ত প্রবাহরোধের কলকব্জা, ম্যানহোলের ঢাকনাগুলোর মত, চুরি হয়ে গিয়েছিল কবে, অথবা সে হয়ত বা একদিন গিয়েছিল ফেঁসে; তাই হোজ় দিয়ে জল দেবার সুযোগ ছিল না আর! আর জন্মান্তরের অপেক্ষায় অনপহৃত পড়ে ছিল প্রাগৈতিহাসিক বিশাল বিশাল দুটো ঢালাই লোহার চৌবাচ্চা, ট্রামের দীর্ঘবিলুপ্ত ঘোড়াদের জল খাবার জন্য, জানলা দিয়ে যে দৃষ্টিপথ তার কিছুটা বাইরে৷

ওই ভিস্তিওয়ালাদের জনৈক আমাদের স্নানঘরের দু-দু’টো মস্ত ড্রামে রোজ ভরে দিত স্নানের জল—একেকদিন দুবার—কারণ প্লাম্বিং-এর দোষে সরকারি জলে কোনওমতে রান্নাঘরের জলাধার গুলো আধভরা হত৷ পেতলের গাগরি ভরে টিপকল থেকে খাবার জল আনত খ্যান্ত পিসি, পরের দিকে ষষ্ঠীর মা; পেছনের বারান্দার রেলিঙের বেদিতে সার সার মাটির কুঁজো, কলসি আর সুরাইতে জল ইভ়াপোরেশনে ঠান্ডা হয়ে থাকত দারুণ গ্রীষ্মে—দাদু বলতেন, “এলিমেন্টারি ফিজ়িক্স!” বাতিওয়ালা সন্ধের মুখেও আসতো মই কাঁধে বাতি জ্বালাতে৷ ওরিয়েন্টাল কোম্পানির গ্যাস, কর্পোরেশনের বেতনভুক বাতিওয়ালা৷…

ওই পেছনের বারান্দার ঠান্ডা সিমেন্টের রেলিঙে চিবুক রেখে দাঁড়ালে দেখা যেত হিন্দুস্তান পার্কে সুনীতি চাটুজ্যে মশাইয়ের বাড়ি (এখন, হায় ভাষাচার্য, সেখানে ফ্যাব ইন্ডিয়ার দোকান) আর সযত্নলালিত বাগান, বিস্তীর্ণ বাগান—অন্তত আমার শৈশবে সেটা বিস্তীর্ণ দেখাত৷ তারও ওপারে অখিল হাউস  নামাঙ্কিত বাড়ি৷ কবে একদিন সুনীতিবাবুর বাগান জুড়ে, দাদুর বারান্দা থেকে স্পষ্ট দেখা যাওয়া অখিল হাউস ঢেকে, গজিয়ে উঠলো একটা স্বভাবসিদ্ধ, কদর্য বহুতল৷

সুনীতিবাবুর বাড়িতে দু’একবার গেছি বাবার সঙ্গে৷ তাঁর বাগানের একান্তে কয়েকটা কলাগাছ ছিল, হয়ত নিষ্ফল বাহারি কলা৷ রাতের অন্ধকারে পেছনের বারান্দা থেকে তাদের আবছা দেখা যেত, হালকা হাওয়ায় পাতা দোলাচ্ছে; শিশুমন দিয়ে দেখলে মনে হত অনেকগুলো ডাইনি বুড়ি—ইংরেজিতে গোটা একটা কোভ়়েন—আমাকে ডাকছে, আয় আয়৷ কল্পনাবিলাসী চোখে আমি অখিল হাউসের ছাদে অনেক ছোট ছোট পরি ও পর দেখতাম৷ শৈশবটা আসলে রূপকথারই দুনিয়া: রাজপুত্তুর রাজকন্যে নিয়ে মেয়েরা ভাবে হয়ত, আমার জগতে পরি-পর, ডাক-ডাকিনী, দৈত্য-দানবরা যত্রতত্র বিচরণ করত৷ রুনকি, আমার পিসির মেয়ে, ঠিক দশ মাসের ছোট আমার চেয়ে; আমার ওপর তার অগাধ বিশ্বাস৷ তাকে বলেছিলাম সুনীতিবাগানের সেই ডাইনিতত্ত্ব, এবং পত্রপাঠ সে বিশ্বাস করেছিল; যদিও আমি নিশ্চিত জানতাম দিনের আলোয় কোভ়েন-টা আটপৌরে কলার ঝাড় হয়ে যায়৷ রুনকি সে কথা কি করে জানবে, ওরা যে গড়িয়াহাট মার্কেট পেরিয়ে, আলেয়া সিনেমা পেরিয়ে, গিনি ম্যানশনেরও ওপারে  সেই সুদূর একডালিয়ায় থাকে!

আমরা, মানে বাবা মা আমি, থাকতাম একঘোড়ার শহর শা’গঞ্জে, কলকাতা থেকে স্থলপথে চল্লিশ মাইল দূর, রেলপথে হাওড়া টু  ব্যান্ডেল চল্লিশ কি.মি. ছাপা থাকত উত্তরছাপ্পান্ন টিকিটে৷ হ্যাঁ, ১৯৫৬-তে হাওড়া-ব্যান্ডেল রেলপথের বিদ্যুতায়ন হয়, অল স্টপ এক ঘন্টা, গ্যালপিং ৪০ মিনিট৷ আগে লাগত দেড়-পৌনেদুই ঘন্টা; এখন নতুন করে আবার তাই, আমরা পিছু হটছি কিনা! লিউইস ক্যারলের বাচ্চা অ্যালিস সাচ্চা বুঝেছিল, এক জায়গায় থাকতে গেলেও প্রাণপন দৌড়োতে হয়; আমাদের জননেতারা সেটা ঠিক বোঝেননি এখনও!

ফি শনিবার আমরা সপরিবারে কলকাতায় যেতাম, ফিরতাম হয় রবিবার বেশি রাতে, নয়তো  সোমবার  খুব ভোরে৷  রাতের  ট্রেনে ফিরলে আমি উৎসুক হয়ে লজেন্সওয়ালা শম্ভুকে খুঁজতাম: হাতে মস্ত একটা তারের বলয়, তা থেকে নানা বর্ণ-গন্ধের ল্যাবেনচুষের সেলোফেন প্যাকেট ঝুলত, “প্যারি  লরেন, প্যারি লরেন, নেবেন ভাই, প্যারি লরেন, নেবু লরেন, অরেন লরেন, হজমি লরেন!” আর উঠতেন শ্বেতকেশ বলাইবাবু, নেমে যেতেন মানকুন্ডুতে; তিনি আমাকে ইসকা মন্তর ফিসকা মন্তরের জাদু শিখিয়েছিলেন জোরদার, নিমেষে জোড়া আঙুলের দৈর্ঘ্য পরিবর্তনের অমোঘ, নজর কাড়া জাদু! কদাচিৎ ভোরের ট্রেনে ফেরার সময় এক শ্মশ্রুগুম্ফময় গেরুয়াপরা ভেকধারীকে দেখতাম; সে দোতারা বাজিয়ে মাঝে মাঝে কন্যাদায়গ্রস্তদের উদ্দেশে গাইতো “টাটা-বাটা-**** বড়, সেথায় জামাই সন্ধান কর” (নক্ষত্র চতুষ্টয়ের জায়গায় যে কোনো একটা তৎকালীন, লাগসই, বহুজাতিকের নাম কল্পনা করে নেবেন), তবে সে বাউল ছিলনা বোধহয়৷

সেই শা’গঞ্জ তখন এক ঘোড়ার শহর তো বটেই! ব্যান্ডেল স্টেশনে তখন একটা, মানে একটাই, সার্থকনামা স্টেশন ওয়াগন ছিল, সবুজ রঙের, সাতটা থেকে সাতটা, সুপ্রাচীন ফোর্ড, তার পেছনের একটা দরজা কেরোসিন কাঠের; সওয়ার ভর্তি হলে অথবা ড্রাইভার সাহেবের মর্জি হলে ছাড়ত৷ আর ছিল মজিদ মিঞার এক-ঘোড়ার ছ্যাকরা৷ সাইকেল রিকশা অবশ্যই থাকত তবে সংখ্যায় নগণ্য, বেশি রাতে তারা জুজুর ভয়ে বাড়ি যেত শুতে; মাথায় থাকুক অন্ন চিন্তা—আপনি বাঁচলে বাপের নাম! জি.টি. রোডে ক্যাম্বেল দম্পতির হত্যা কাণ্ড পাবলিক অতো দিন পরেও মনে রেখেছিল৷

তখন হাওড়া স্টেশন থেকেও অবশ্য ঘোড়ার গাড়ি নির্বাসিত হয়নি—সীমিত রাস্তায়, কাছের রাস্তায় চলত; আলাদা স্ট্যান্ড ছিল বোধহয় আজকের স্টিমারঘাটার টিকিটঘরের কাছে৷ অশ্ববরে মাখামাখি হয়ে থাকত তাদের পার্কিং লট। একবার ভারি বর্ষণে কলকাতা অর্ধনিমজ্জিত, যন্ত্রযান অকুলান, হাওড়ায় নেমে অসহায় আমরা গ্র্যান্ড হোটেল অবধি ঘোড়ার গাড়িতে গিয়েছিলাম—আবছা মনে আছে—সেখান থেকে ট্যাক্সি৷…

দুশো দুইয়ের কালো গেটের ডানদিকের পাল্লায় একপা ফাঁসিয়ে অন্য পায়ের ধাক্কায় আমরা মহানন্দে ক্যাঁচকোঁচ করে দুলতাম—দীর্ঘকালীন মজবুতির পরীক্ষায় সসম্মানে পাশ করেছিল ঢালাইয়ের কারিগর—তবে দরওয়ানজি দেখতে পেলে তেড়ে এসে বিনীত ভঙ্গিতে তুলসীদাসি সুর করে বলত, “ভেঙ্-গে গেলে/ গির পড়োগে,/ চোট লাগেগা,/ বুঢ়াবাবুকো/ নুকসান হোবে!” গেটের ডানদিকে ফুটপাথ থেকে খাড়া উঠে গেছে একটা তিনতলা বাক্সবাড়ি৷ তার রাস্তামুখী একতলায় কয়েকটা দোকান: আগে ছিল সীবনী, পাদুকালয় আর টাইমকো, তারও আগে সীবনীর জায়গায় ছিল দরওয়ানজির একটি মাত্র পা-কলের দোকান, পর্দা সেলাই, থানকাপড় বা ধুতি দিয়ে লুঙ্গি সেলাই, মায় উজ্জ্বলা ছুটকির ফ্রক (আমারও একটা কামিজ় একবার) সেলাই হত, পুজোর আগে রড থেকে ঝুলত বেশ কিছু অর্ডারি শার্ট প্যান্ট৷ এখন সেখানে সার সার শাড়ি আর রকমারি রেডিমেড জামাকাপড়ের দোকান—চেনা দায়!

মাস পড়লে দরওয়ানজি এসে বাড়ি ভাড়া নিয়ে যেত বাড়িউলির প্রতিভূ হয়ে; পারসি বাড়িউলিকে আমি অন্তত দেখিনি কখনও৷ দুর্গাঠাকুর ভাসানের সময় দরওয়ানজি নানা দাদুকে দোকানের দুটো ভাঁজ করা কেঠো চেয়ার সসম্মানে বের করে দিত: “বাবুজি, মাজি, আরাম কোরেন, নহি তো থক জাওগে!” দাদু বলতেন ‘অতিভক্তি...!’

গেটের বাঁদিকে মদনের এক চিলতে পানবিড়ির দোকান, তবে সেখানে ভিমটো লেমনেডও পাওয়া যেত, পরের দিকে কোকাকোলা জুসলা৷ নরম করে চাইলে বেগনি লুঙ্গি, হাপহাতা গেঞ্জি আর হাতে গলায় অনেক মাদুলি তাবিজ পরা মদন মাঝেমধ্যে এক আধ চিমটে মিষ্টি মশলাও দিত—নিতান্ত অনিচ্ছায়৷ এখন সেখানে অনেকটা জায়গা জুড়ে বাটার দোকান৷

চাতালের এপাশ ওপাশ দুটো একই রকম তেতলা বাড়ি, দুটোরই ঠিকানা ২০২৷ ফুটপাথের ওপর যে বাড়িটা তার দোতলায় দু নম্বর ফ্ল্যাটে থাকতেন বুদ্ধদেব বসু—সেটাই কবিতাভবন, সেখান থেকেই কবিতা  পত্রিকা প্রকাশ হত, এবং বৈশাখী, আর এক পয়সায় একটি  সিরিজের চটি কিন্তু মূল্যবান কাব্যমালা৷ সুনীল বসুর মিলিতা  তার অন্যতম; তাঁর ঘোঁড়া   কবিতাটা চন্দ্রবিন্দুদোষে জ্যেঠার নাপসন্দ—আমার পছন্দ ছিল কেঁচো  বলে কবিতাটা: “কেঁচো চেয়েছিল মাটিকে জানতে/ খানা খন্দলে দেহলি প্রান্তে...৷”

ছবি তোলার জন্য স্বাভাবিক আলো দরকার হলে, অথবা গুরুজন পরিবৃত ফ্ল্যাটে সিগারেট খাওয়ার সুযোগ অকুলান হলে বাবা ছাদে যেতেন৷ দাদুর ফ্ল্যাটের এজমালি ছাদে একটা ভাঙা ট্রাইসাইকেল ছিল; ছিল মানে তার ভগ্নাবশেষ আরকি! কখনো ভাবিনি কার সাইকেল—দাদার না দেবুদার—হয়ত শিশুসুলভ অধিকারবোধে ভাবতাম আমারই! মনে আছে, তার বিচ্ছিন্ন দ্বিচক্র চক্রদন্ডটা দুহাতে বারবেলের মত মাথার ওপর তুলতাম অল্পায়াসে—বাবার তোলা একটা ফিকে হয়ে যাওয়া ছবি এখনো বোধহয় মায়ের ফেলে যাওয়া সযত্ন সংগ্রহের মধ্যে খুঁজলে পাওয়া যাবে—স্মৃতিটা হয়ত সেই ছবিটারই শুধু৷ ওই ছাদে দাঁড়িয়ে পাশের বাড়ির—যে দিকটায় এখন বাটার দোকান—খনাদি মনাদির সঙ্গে জমে গিয়েছিল আমার, আমারই মারফত আমাদের হাঁড়ির খবর তারা জানত—মায়ের কাছে বকুনি খেতাম তাই৷ একেকদিন খাবার নিয়ে দুষ্টুমি করলে মা  এক  হাতে থালা অন্য হাতে আমার ঘেঁটি ধরে ছাদে ঘুরে ঘুরে খাওয়াতেন৷ কোনো অজ্ঞাত কারণে হঠাৎ একসময় ছাদটা আমাদের অনধিগম্য হয়ে যায়; প্রথম প্রথম মিস করতাম খুব, পরে সয়ে গেল আর পাঁচটা বঞ্চনার মত৷ ছেলেবেলার কথা লিখতে বসে দীর্ঘকাল পরে সেই ছাদের কথা মনে পড়ল, যে ছাদটাকে শৈশবের স্বল্প পরিচয়ের পর আর দেখিনি কোনোওদিন, দেখবও না!

আর মনে পড়ল, গ্রীষ্মের দুপুর বেলা যখন ঠাকুদ্দা ঠাকুমার শয়নকক্ষের সব কাঠের জানলা বন্ধ, খড়খড়ির সূক্ষ্ম ফাঁক দিয়ে তীব্র সূর্যালোক লখিন্দরের বাসরের ছিদ্রান্বেষী সাপটার মত অলক্ষিতে ঘরে ঢুকে পড়ত, তার মধ্যে আপন মনে নাচত লক্ষ ধুলিকণা৷ একেকদিন নিদ্রাহীন আমি দেখতে পেতাম সাদা পরদার ওপর রঙিন শাড়ির উলটো ছবি, রঙিন এবং সীমিত চৌহদ্দিতে চলিষ্ণু, খনাদি মনাদিদের বাড়ির মতির মা বেলায় কাচা কাপড় মেলছে: পিন হোল ক্যামেরার দ্য ভ়িনসীয় যাদু! দীর্ঘ, দীর্ঘতর নিশ্বাসের মত নির্জন আর বিধুর স্মৃতি সব, ফিকে হয়ে যাওয়া ফ়োটোগ্রাফের মত—জানিনা তার কতটা বাস্তব আর কতটা মায়া!

তবে, ওই বাড়ির কোনার ঘর, যেটা আগে ছিল বাবা মায়ের শয়নকক্ষ, মধ্যযুগে খাবার ঘর, সবশেষে দাদা বৌদির বাসর, সেটাই আমার জন্মস্থান; আমার চিকিৎসক দাদু নিজের হাতে আমায় আলো দেখিয়েছেন ৷


© Aniruddha Sen - Member WaaS

No comments: